তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে: জানুন ও আমল করুন
আসসালামু আলাইকুম!
রমজান মাস মানেই রহমতের বন্যা। আর এই রহমতের অন্যতম একটা অংশ হলো তারাবির নামাজ। দীর্ঘ একটি মাস তারাবির নামাজ আদায় করার পরে, মনটা যেন শান্তি ও কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে। কিন্তু তারাবির নামাজ শেষে মুনাজাতের দোয়াগুলো কি আমাদের মুখস্ত আছে? আরবিতে সেই দোয়াগুলো পাঠ করার নিয়মই বা কী?
চিন্তা নেই, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে (Tarabir Namajer Dua o Munajat Arabite) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যেন এই রমজানে আমরা সবাই সুন্দরভাবে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারি।
তারাবির নামাজ: ফজিলত ও তাৎপর্য
তারাবির নামাজ শুধু একটি নামাজ নয়, এটি রমজান মাসের বিশেষ উপহার। দীর্ঘ একটি মাস ধরে ইশার নামাজের পর এই নামাজ আদায় করা হয়। এর ফজিলত অনেক।
- গুনাহ মাফ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে, তার আগের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারী, মুসলিম)
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ: তারাবির নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। এই নামাজে দীর্ঘ সময় ধরে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করার সুযোগ পাওয়া যায়।
- শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি: তারাবির নামাজ শারীরিক exercise এর মত ও মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার কারণে শরীরের উপকার হয়, মন শান্ত থাকে।
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির নামাজ এশার নামাজের পর আদায় করা হয়। এটি ২০ রাকাত নামাজ। প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফিরিয়ে দোয়া পড়তে হয়। নিচে তারাবির নামাজের নিয়ম দেওয়া হলো:
- ইশার নামাজের ফরজ ও সুন্নত আদায় করার পর তারাবির নামাজ শুরু করতে হয়।
- প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত করতে হয়।
- এভাবে ১০ সালামে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।
- তারাবির নামাজে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হয়।
তারাবির নামাজের দোয়া (আরবি, বাংলা অর্থসহ)
প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফিরিয়ে একটি দোয়া পড়তে হয়। এই দোয়াটি তারাবির নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিচে আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দোয়াটি দেওয়া হলো:
আরবি:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
বাংলা উচ্চারণ:
"সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা যিল ইয্যাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাযী লা ইয়ামুতু। সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যলিমিন।"
বাংলা অর্থ:
“পবিত্র সেই সত্তা, যিনি সাম্রাজ্য ও ক্ষমতার মালিক। পবিত্র সেই সত্তা, যিনি সম্মান, মহত্ত্ব, ভয়, শক্তি, শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রতাপের মালিক। পবিত্র সেই সত্তা, যিনি চিরঞ্জীব, কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। তিনি পরম পবিত্র, আমাদের রব এবং ফেরেশতা ও রুহের রব। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”
তারাবির নামাজের মোনাজাত (আরবি, বাংলা অর্থসহ)
তারাবির নামাজের শেষে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর রহমত কামনা করি। নিচে আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ মোনাজাতের দোয়া দেওয়া হলো:
আরবি:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
বাংলা উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।"
বাংলা অর্থ:
“হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন।”
অন্যান্য দোয়া:
এছাড়াও আপনি নিজের ভাষায় বা অন্য কোনো দোয়াও মোনাজাতে যোগ করতে পারেন।
তারাবির নামাজ বিষয়ক কিছু জরুরি মাসআলা
তারাবির নামাজ আদায় করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এগুলো আমাদের নামাজকে আরও সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত করতে সাহায্য করবে।
- ইমামের অনুসরণ: তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা উত্তম। এক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণ করা জরুরি।
- কুরআন তেলাওয়াত: তারাবির নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করা সুন্নত। তবে যদি কেউ কুরআন পড়তে না পারেন, তবে অন্য কোনো সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।
- ধীরস্থিরতা: তারাবির নামাজে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। ধীরে-সুস্থে, বুঝে-শুনে নামাজ আদায় করা উচিত।
রমজানে তারাবির গুরুত্ব
রমজান মাসে তারাবির নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। এটি শুধু একটি নামাজ নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং গুনাহ মাফের সুযোগ। তাই এই মাসে তারাবির নামাজ আদায় করার জন্য আমাদের সকলের চেষ্টা করা উচিত।
মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ
মহিলারাও তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেন। তারা বাড়িতে জামাত করে অথবা একাকী এই নামাজ আদায় করতে পারেন।
শিশুদের তারাবির নামাজে উৎসাহিত করা
ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে নামাজের অভ্যাস তৈরি করা উচিত। তাই রমজান মাসে তাদের তারাবির নামাজে উৎসাহিত করা উচিত।
FAQ: তারাবির নামাজ নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
তারাবির নামাজ নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
তারাবির নামাজ কত রাকাত?
তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। এটি এশার নামাজের পর আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজ কি ফরজ?
না, তারাবির নামাজ ফরজ নয়, এটি সুন্নত।
তারাবির নামাজে সূরা তারতীলের নিয়ম কি?
তারাবির নামাজে তারতীল অনুযায়ী কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। এর মানে হলো ধীরে ধীরে, স্পষ্ট উচ্চারণে কুরআন পড়া।
মহিলারা কিভাবে তারাবির নামাজ পড়বেন?
মহিলারা বাড়িতে জামাত করে অথবা একাকী তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেন।
তারাবির নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়?
“আমি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারাবির ২০ রাকাত নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি।”
তারাবির নামাজ কাজা হলে করণীয় কী?
তারাবির নামাজ কাজা হলে তা আদায় করার নিয়ম নেই, কারণ এটি রমজান মাসের বিশেষ নামাজ।
বিতর নামাজ কখন পড়তে হয়?
বিতর নামাজ এশার নামাজের পরে এবং তারাবির নামাজের শেষে পড়তে হয়।
তারাবির নামাজ পড়ার সময় কোন দোয়া পড়তে হয়?
প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফিরিয়ে “সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি” এই দোয়াটি পড়তে হয়।
তারাবির নামাজের মোনাজাতের নিয়ম কি?
তারাবির নামাজের শেষে ইমাম সাহেব মোনাজাত করেন। মোনাজাতে সবাই একসঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
তারাবির নামাজে ভুল হলে কি করতে হবে?
নামাজে ভুল হলে সাহু সিজদা দিতে হয়।
তারাবির নামাজের ফযিলত কি?
তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।
উপসংহার
তারাবির নামাজ রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই নামাজ শুধু আমাদের গুনাহ মাফ করায় না, বরং আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। তাই আসুন, আমরা সকলে মিলে এই রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করি।
এই ব্লগ পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
রমজান মোবারক!